কালেমা সমূহ

 
 কালেমা তাইয়্যেবা

لاَ اِلَهَ اِلاَّ اللهُ مُحَمَّدُ رَّسُوْ لُ الله

উচ্চারণঃ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ।
অনুবাদঃ আল্লাহ ভিন্ন ইবাদত বন্দেগীর উপযুক্ত আর কেহই নাই । হযরত মুহাম্মদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম তাঁহার প্রেরিত রসূল ।

কালেমা শাহাদত

اَشْهَدُ اَنْ لاَّ اِلَهَ اِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَشَرِيْكَ لَه’ وَاَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُه’ وَرَسُوْلُه’

উচ্চারন ঃ আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওহদাহু লা-শারীকালাহু ওয়াশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাছুলুহু ।
অনুবাদ ঃ আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে , অল্লাহ ভিন্ন আর কেহই ইবাদতের উপযুক্ত নাই তিনি এক তাঁহার কোন অংশীদার নাই ।আমি আরও সাক্ষ্য দিতেছি যে, হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর শ্রেষ্ঠ বান্দা এবং তাঁহার প্রেরিত নবী ।

কালেমা তাওহীদ

لاَ اِلَهَ اِلاَّ اَنْتَ وَاحِدَ لاَّثَانِىَ لَكَ مُحَمَّدُرَّ سُوْلُ اللهِ اِمَامُ الْمُتَّقِيْنَ رَسُوْ لُرَبِّ الْعَلَمِيْنَ

উচ্চারণ ঃ লা-ইলাহা ইল্লা আনতা ওয়াহেদাল্লা ছানীয়ালাকা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লা ইমামুল মোত্তাকীনা রাছুলুরাবি্বল আলামীন ।
অনুবাদ ঃ আল্লাহ ভিন্ন কেহ এবাদতের যোগ্য নাই । তিনি এক তাঁহার অংশীদার নাই মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) সোত্তাকীনদের (ধর্মভীরুগণের) ইমাম এবং বিশ্বপালকের প্রেরিত ।

কালেমা তামজীদ

لاَ اِلَهَ اِلاَّ اَنْتَ نُوْرَ يَّهْدِىَ اللهُ لِنُوْرِهِ مَنْ يَّشَاءُ مُحَمَّدُ رَّسَوْ لُ اللهِ اِمَامُ الْمُرْسَلِيْنَ خَا تَمُ النَّبِيِّنَ

উচ্চারন ঃ লা-ইলাহা ইল্লা আনতা নুরাইইয়াহ দিয়াল্লাহু লিনুরিহী মাইয়্যাশাউ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহি ইমামূল মুরছালীনা খাতামুন-নাবিয়্যীন ।
অনুবাদ ঃ হে খোদা! তুমি ব্যতীত কেহই উপাস্য নাই, তুমি জ্যোতিময় । তুমি যাহাকে ইচ্ছা আপন জ্যোতিঃ প্রদর্শন কর । মুহাম্মদ (সাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) প্রেরিত পয়গম্বরগণের ইমাম এবং শেষ নবী।
ঈমানের আসল বস্তু তাওহীদ। এক কথায় তাওহীদ শব্দের অর্থ একাত্ব-বাদ । কিন্তু ইহার ব্যাপক ও ব্যবহারিক অর্থ কয়েক প্রকারে বিভক্ত । প্রথমতঃ ইহার অর্থ আল্লাহপাকের সর্বত ভাবে এক জানা, কাহাকেও তাঁহার সমকক্ষ মনে না করা । তাঁহার সাথে কাহাকেও চিন্তায়, কল্পনায় বা কর্মে অংশীদার স্থাপন না করা এবং ‘আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নাই’ এই কথার উপর দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করিয়া একমাত্র তাঁহারই উপর উপাসনায় রত হওয়া ।
এই সম্পর্কে আল্লাহপাকের একটি পবিত্র কালাম এই যে

وَمَا اُمِرُوْا اِلاَّلِيَعْبُدُ اللهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ حُنَفَاءَ-

অর্থৎ-তাহাদিগকে অন্য সব দেব-দেবীর পূজা ছাড়িয়া (খালেছ ভাবে) শুধুমাত্র এক আল্লাহ পাকের এবাদত করার জন্য আদেশ করা হইয়াছে।

কালেমা রদ্দেকুফর

اَللَّهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُبِكَ مِنْ اَنْ اُشْرِكَ بِكَ شَيْئً وَاَنَا اعَلَمُ بِهِ وَاَسْتَغْفِرُكَ لِمَا اعَلَمُ بِهِ وَمَا لاَاعَلَمُ بِهِ تُبْتُ عَنْهُ وَتَبَرَّأتُ مِنَ الْكُفْرِ وَالشِّرْكِ وَالْمَعَاصِىْ كُلِّهَا وَاَسْلَمْتُ وَاَمَنْتُ وَاَقُوْلُ اَنْ لاَّاِلَهَ اِلاَّاللهُ مُحَمَّدُ رَّسَوْلُ اللهِ –

উচ্চারণ ঃ আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিন আন উশরিকা বিকা শাইআও ওয়া আনা আলামু বিহি ওয়া আসতাগ ফিরুকা লিমা আলামু বিহি ওয়ামা লা আলামু বিহি তুবতু আনহু ওয়া তাবাররাতু মিনাল কুফরি ওয়াশ্শির্কি ওয়াল মা আছি কুল্লিহা ওয়া আসলামতু ওয়া আমানতু ওয়া আক্বলু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদু রাসূলুল্লাহ ।
অনুবাদ ঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশা করছি, যেন কাহাকেও তোমান সহিত অংশীদার না করি । আমার জানা-অজানা গুনাহ হতে ক্ষমা চহিতেছি এবং ইহা হতে তওবা করিতেছি । কুফর, শিরক এবং অন্যান্য সমস্ত গুনাহ হতে বিদুরীত হইতেছি এবং প্রতিজ্ঞা করিতেছি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন মাবুদ নাই, মুহাম্মদ মুস্তফা (সাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) তাঁহার রাসুল ।

গোসলের ফরয ও সুন্নাত সমূহ

গোসলের ফরয তিনটিঃ
1. ভালভাবে একবার কুলী করা। (সুরা মায়িদা, আয়াত-6) 
2. নাকের নরম স্থান পরযন্ত একবার পানি পৌছানো।(সুরা মায়িদা, আয়াত-6) 
3. সমস্ত শরীরে একবার পানি পৌছে দেয়া, যেন কোথাও এক চুল পরিমাণ শুকনো না থাকে। (সুরা মায়িদা, আয়াত-6, তিরমিজি-103, আল বাহরুর রায়িক-1/45,শামী-1/151) 

গোসলের সুন্নাত সমূহঃ 

1. ফরয গোসলের পূর্বে ইস্তিঞ্জা অর্থাৎ পেশাব করা।(মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাঃনং-1020) 
2. শুরুতে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পড়া।(মুসনাদে আহমাদ, হাঃনং-12694)
3. পৃথকভাবে উভয় হাত কব্জিসহ ধোয়া।(বুখারী শরীফ, হাঃনং-248) 
4. শরীর বা কাপড়ের কোন স্থানে নাপাকী লেগে থাকলে প্রথমে তা তিনবার ধুয়ে পবিত্র করে নেয়া।(মুসলিম শরীফ, হাঃনং-321) 
5. নাপাকী লেগে থাকলে বা না লেগে থাকলে সর্ব অবস্থায় গুপ্তাঙ্গ ধৌত করা। এরপর উভয় হাত ভালভাবে ধুয়ে নেয়া। (বুখারী শরীফ, হাঃনং-249) 
6. সুন্নাত তরীকায় পূর্ণ উযু করা। তবে গোসলের স্থানে পানি জমে থাকলে, গোসল শেষ করে পা ধৌত করবে। (বুখারী শরীফ, হাঃনং-260) 
7. প্রথমে মাথায় পানি ঢালা। (বুখারী শরীফ, হাঃনং-256) 
8. এরপর ডান কাধে পানি ঢালবে।(বুখারী শরীফ, হাঃনং-254) 
9. এরপর বাম কাধে পানি ঢালবে।(বুখারী শরীফ, হাঃনং-254) 
10. অতঃপর অবশিষ্ট শরীর ভিজানো। (বুখারী শরীফ, হাঃনং-274) 
11. সমস্ত শরীরে এমনভাবে তিনবার পানি পৌছানো, যেন একটি পশমের গোড়াও শুষ্ক না থাকে। (আবু দাউদ, হাঃনং-249/মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ, হাঃনং-813) তবে নদী-পুকুর ইত্যাদিতে গোসল করলে কিছুক্ষণ ডুব দিয়ে থাকলেই তিনবার পানি ঢালার সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে।(আবু দাউদ, হাঃনং-249/মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ, হাঃনং-813) 
12. সমস্ত শরীর হাত দ্বারা ঘষে-মেজে ধৌত করা।(তিরমিজি, হাঃনং-107)

তায়াম্মুমের ফরয তিনটি


1. নিয়ত করা অর্থাৎ নামায পড়া বা কোরআন তিলাওয়াতের জন্য পবিত্রতা অর্জনের নিয়ত করা। (সুরা নিসা, আয়াত-43)
2. অতঃপর মাটি বা মাটি জাতীয় কোন পবিত্র জিনিসে প্রথমবার হাত মেরে সমস্ত মুখমন্ডল মাসাহ করা।(সুরা নিসা, আয়াত-43)
3. অনুরূপভাবে দ্বিতীয় বার মাটিতে হাত মেরে দুই হাত কনুইসহ মাসাহ করা।(ঐ, হিদায়া, 1:50-51, আলমগীর-1:25-26)

তায়ম্মুমের সুন্নাত সমূহঃ 

1. তায়াম্মুমের শুরুতে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পড়া।(মুসনাদে আহমাদ, হাঃনং-12694)
2. মাটিতে হাত রাখার সময় আঙ্গুল সমূহ ফাক করে রাখা।(মুসলিম শরীফ, হাঃনং-368)
3. মাটিতে উভয় হাত রাখার পর হস্তদ্বয় সামান্য আগে পিছে নিয়ে মাটিতে ঘর্ষণ করা।(মুসলিম শরীফ, হাঃনং-368) 4. তারপর উভয় হাত ঝেড়ে নেয়া।(মুসলিম শরীফ, হাঃনং-368)
5. তায়াম্মুমের অঙ্গসমূহ মাসাহ করার সময় ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। অর্থাৎ প্রথমে সম্পূর্ণ মুখমন্ডল, তারপর ডান, অতঃপর বাম হাত কনুইসহ মাসাহ করা।(আবু দাউদ, হাঃনং-330)
6. চেহারা ও হাতের মাসাহ এর মাঝে বিলম্ব না করা।(আবু দাউদ, হাঃনং-330)

তায়াম্মুমের মাসায়েলঃ

1. পানি না পাওয়ার কারণে যাকে তায়াম্মুম করতে হবে, পানি পাওয়ার প্রবল ধারণা থাকলে মোস্তাহাব ওয়াক্ত পার হওয়ার পুর্ব পযর্ন্ত অপেক্ষা করা তার জন্য মোস্তাহাব। আর কেউ পানি দেয়ার ওয়াদা করলে অবশ্যই তাকে অপেক্ষা করতে হবে, যদিও ওয়াক্ত শেষ হওয়ার আশংকা হয়।


নামাযের প্রয়োজনীয় দোয়া ও নিয়ম

ছানাঃ 

سُبْحَانَكَ اَللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَا لَى جَدُّكَ وَلاَ اِلَهَ غَيْرُكَ

উচ্চারণ: সুবাহানাকা আল্লাহুমা ওয়া বিহামদিকা ওয়াতাবারা কাসমুকা ওয়া তায়ালাজাদ্দুকা ওয়া লা-ইলাহা গাইরুকা ।অনুবাদ: হে আল্লাহ! তুমি পবিত্র সকল প্রশংসা তোমারই । তোমার নাম মঙ্গলময় । তোমার মহিমা অতীব উচ্চ । তুমি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নাই ।নামাজের  ফরযঃ নামায আদায় করিতে হইলে কতকগুলি নিয়ম অবশ্যই পালন করিতে হইবে । নামাজের বাহিরে  সাতটি নিয়ম । ইহাকে নামাজের শর্ত বলে এবং নামাজের ভিতরে ছয়টি ফরয । ইহাকে রোকন বলে ।নামাযের শর্তসমূহনামাজ আরম্ভ করিবার পূর্বে যে সমস্ত কাজ অবশ্য কর্তব্য, তাহাকে নামাযের শর্ত বলে । ইহা সাতটি; যথা :-১) শরীর পাক-পবিত্র করিয়া লওয়া, অর্থাৎ অযু কিংবা গোসলের প্রয়োজন হইলে তাহা আদায় করিয়া লইতে হইবে ।২) পোষাক পাক হওয়া । যদি কাপড়ে কোন নাপাক বস্তু নাগিয়া থাকে তাহা ধুইয়া পাক করিয়া লইবে অথবা উহা পরিবর্তন করিয়া পাক-পবিত্র কাপড় পরিধান করিয়া লইতে হইবে ।৩) স্থান পাক হওয়া -অর্থাৎ যে স্থানে দাঁড়াইয়া নামায পড়িবে, তাহা পাবিত্র হওয়া ।৪) ছতর ঢাকিয়া লওয়া – অর্থাৎ নামায পড়িবার সময়ে পুরুষের নাভী হইতে ও স্ত্রীলোক হইলে মুখ, হাতের কব্জা ও পায়ের তলা ব্যতীত সমুদয় শরীর ঢাকিয়া লওয়া কিন্তু বাদী হইলে পেট, পিঠ, পার্শ্ব ও নাভী হইতে জানুর নীচ পযন্ত কাপড় দ্বারা ঢাকিয়া লওয়া ফরয ।৫) কাবা শরীফের দিক মুখ করিয়া দাঁড়ান ।৬) নির্দিষ্ট ওয়াক্তে নামাজ আদায় করা । নিয়ত করা-যে ওয়াক্তের নামায পড়িবে, তাহার নিয়ত করা ।৭) তাকবীরে তাহরীমা বলা । অর্থৎ নামাজের নিয়ত করিয়া “আল্লাহু আকবার” বলিয়া নামায আরম্ভ করা ।নামাযের রোকনসমূহনামায আরম্ভ করিবার পর হতে যে সকল কাজ করা ফরয, তাহাকে নামাযের রোকন বলে । ইহা মাত্র ছয়টি; যথা :-১) দাঁড়াইয়া নামায আদায় করা ।২) নামাযের মধ্যে কোরান পাকের কিছু আয়াত পাঠ করা ।৩) রুকু করা ।৪) সিজদা করা ।৫) শেষবৈঠকে তাশাহুদ পাঠ করা ।৬) নামাযে শেষ বৈঠকে বসা এবং সালাম ফিরানো।

ছালামের সহিত নামায ভঙ্গ করা সুন্নত । নামায আদায় করিতে গিয়া উপরোক্ত ১৪টি ফরযের কোন একেটি ভুলেও ছাড়িয়া দিলে নামায শুদ্ধ হবে না; নামায পুণরায় পড়িতে হইবে ।

নামাযে ওয়াজিব

নিম্নে নামাযের ওয়াজিব সমুহ বর্ননা করা হলো। ওয়াজিব সমুহ হলো:
সুরা ফাতিহা পুরা পড়া(আলহামদুশরীফ)
ফাতিহার সাথে অন্য সুরা মিলানো
রুকু সেজদায় দেরী করা।
রুকু হতে সোজা হয়ে খাড়া দাড়ানো
দুই সেজদার মাঝখানে সোজা হয়ে বসা
দর্মিয়ানী বৈঠক ( ২রাকাত নামায হলে এক বৈঠক, ৩ রাকাত নামায হলে ২ বার বৈধক এবং ৪ রাকাত নামায হলে ২ বার বৈধক করা)
বৈঠকে আত্তাহিয়াতু পড়া।
ইমামের জন্য ক্বিরাত আস্তে পড়া( যহুর ও আছর নামায) এবং জোড়ে পড়া(ফজর, মাগরিব, ইশা)
বিতরের নামাযে দোয়া কুনুত পড়া।
দুই ঈদের নামাযে অতিরিক্ত তাকবির বলা।
প্রত্যেক ফরয নামাজের প্রথম ২ রাকাতকে ক্বিরাতের জন্য ঠিক করা।
প্রত্যেক রাকাতের ফরজগুলির তারতীব ঠিক রাখা।
প্রত্যেক রাকাতের ওয়জিবগুলির তারতীব ঠিক রাখা।
আসসালামু আলাইকুম বলে নামায শেষ করা ।
ওয়াজিব ছুটে গেলে সিজদা সাহু দিতে হবে । না হলে নামাজ শুদ্ধ হবে না । 


নামাযের সুন্নত সমূহ


১) তাকবীর বলিয়া দুই হাত কর্ণের লতি পর্যন্ত উঠান ।
২) হাতের আঙ্গুল পরস্পর পৃথক রাখা ।
৩) ইমামের জন্য নামায আরম্ভের তাকবীর উচ্চঃস্বরে পড়া ।
৪) ছানা পাঠ করা ।
৫) “আউযুবিল্লাহ্” পাঠ করা ।
৬) “বিছমিল্লাহ্” পাঠ করা ।
৭) সূরা ফাতিহা পাঠ করিবার পর ঈমাম ও মুস্তাদিগণের মৃদুস্বরে “আমীন” বলা ।
৮) পুযরুষের জন্য নাভীর নীচে তাহরিমা বাঁধা আর স্ত্রী লোকের জন্য ছিনার উপরে তাহরিমা বাঁধা ।
৯) রুকুর তাকবীর বলা ।
১০) রুকুতে দুই জানু ধরা ও আঙ্গুল সমুহ পরস্পর পৃথক রাখা ।
১১) রুকুর ভিতরে তিন, পাঁচ বা সাতবার তাছবীহ্ বলা ।
১২) রুকু হইতে উঠিয়া সোজা হইয়া দাঁড়ান ।
১৩) রুকু হইতে উঠিবার সময়ে ইমামের “ছামিয়াল্লাহ হুলিমান হামীদা” ও মোক্তাদিগণের “রাব্বানা লাকাল হামদ” বলা ।
১৪) ছেজদায় যাইয়া দুই হাঁটু ও তাকবীর বলিয়া বসা ।
১৫) ছেজদায় তাছবীহ্ পড়া ।
১৬) পুরুষের জন্য ছেজদাহ হইতে উঠিয়া ডান পা খাড়া রাখিয়া বাম পায়ের উপর বসা, আর স্ত্রীলোকের উভয় পা ডান দিকে বাহির করিয়া ছতরের উপর বসা ।
১৭) ছেজদা থেকে উঠিয়া এক তছবীহ্ পরিমাণ সময় বসিয়া থাকা ।
১৮) দরুদ শরীফ পাঠ করা ।
১৯) দোয়ায়ে মাছুরা পড়া ।
২০) দুই দিকে ছালাম ফিরান ।

নামাযের মোস্তাহাব সমূহঃ 


  • এক্বামতের সময়ে “হাইয়্যালাল ফালাহ্” বলামাত্র নামাযে ঠিকভাবে দাঁড়ান ।
    তাকবীরে তাহরীমা বলার সময়ে আন্তিন হইতে হাতের তালু বাহির করা ।
    দাঁড়াইবার সময়ে সিজদার জায়গার প্রতি দৃষ্টি রাখা ।
    রুকুতে পায়ের পাতার দিকে দৃষ্টি রাখা ।
    বৈঠকে কোলের দিকে দৃষ্টি রাখা ।
    সাধ্যানুযায়ী হাসি ও কশি বন্দ রাখা ।
    রুকুতে মাথা ও পৃষ্ঠ ভাগ সমান উঁচু রাখা ।
    সিজদায় প্রথমে দুই জানু ও দুই হাত জমিনে রাখা, পররে নাক ও তারপরে কপাল জমিনে রাখ এবং সেজদা হইতে উঠিবার সময়ে যথাক্রমে প্রথমে কপাল, পরে নাক উঠাইয়া তৎপর দুই হাত জানুর উপরে রাখিয়া বসা ।
    দুই হাতের মধ্যে মস্তক রাখা, নাক দুই বুদ্ধাংগুলির মধ্যে বরাবর রাখা ।
    হাত-পায়ের আঙ্গুলিসমূহ কেবলা মোখ রাখা ।
    ছালাম ফিরাইতে দুই স্কন্ধের প্রতি দৃষ্টি রাখা ।
    সেজদায় পুরুষের পক্ষে দুই বাজু প্রথক ভাবে রাখা ও এইরূপ ভাবে উঁচুতে রাখিতে হইবে । যেন বকরীর বাচ্চা যাতায়াত করিতে পারে । কিন্তু স্ত্রীলোকের পক্ষে সেজদায় ইহার বিপরীত করিতে হইবে । যেমন দুই বাজু চাপিয়া রাখা এবং রানের উপর পেট রাখা ।
    তিন বারের অধিক-বেজোড় তছবীহ্ পড়া ।
    ফযরের নামাযে প্রথম রাকআতে ত্রিশ আয়াত পাঠ করা । দ্বিতীয় রাকআতে কুড়ি আয়াতপাঠ করা ।
    জোহরের নামাজে ত্রিশ আয়াত পাঠ করা ।
    আছরের নামাজে ২০ (কুড়ি) আয়াত পাঠ করা ।
    মাগরিবের নামাজে ছোট ছোট সূরাহ পাঠ করা ।
    এশার নামাজে বিশ আয়াত পাঠ করা ।

নামাযের মাকরূহাতঃ 

১) চাদর বা জামা না পড়িয়া কাঁধে ঝুলাইয়া রাখা ।
২) ময়রা ধুলা-বালি লাগিবার ভয়ে কাপড় জামা গুটানো ।
৩) আঙ্গুল মটকান ।
৪) বস্ত্র শরীর অথবা দাঁড়ির সহিত খেলা করা ।
৫) এদিক ওদিক দেখা ।
৬) চুল মাথার উপরিভাগে বাঁধা ।
৭) বিনা ওজরে সেজদার স্থানের ইট-পাথর সরান ।
৮) আলস্যভরে শরীর মোড়ামুড়ি করা ।
৯) সিজদার সময়ে হাত বিছাইয়া দেওয়া ।
১০) আগের কাত।রে স্থান থাকিতে পিছনের কাতারে দাঁড়ানো ।
১১) অবহেলা করিয়া খালি মাথায় নামায পড়া ।
১২) আকাশের দিকে তাকান ।
১৩) ভাল কাপড় থাকা সত্ত্বেও মন্দ কাপর পড়ে নামায পড়া ।
১৪) নামাযের মধ্যে কপালের মাটি মুছিয়া ফেলা ।
১৫) কোন প্রাণীর ছবি সম্মুখে ডাইনে বামে মস্তকের উপর বা কাপড়ের মধ্যে থাকা ।
১৬) সিজদার সময়ে বিনা কারণে হাটুর পূর্বে হাত মাটিতে রাখা ।
১৭) বিনা কারণে আসন পাতিয়া বসা ।
১৮) ফরয নামাযে এক সূরা বার বার পড়া ।
১৯) কোন মানুষের মুখের দিক হইয়া নামায পড়া ।
২০) সিজাদাতে পিঠ উভয় উরুর সহিত মিলাইয়া দেওয়া ।
২১) এক হাত বা তদুর্ধ স্থানে ইমামের দাঁড়ান ।
২২) নাক-মুখ ঢাকিয়া নামায পড়া ।
২৩) উভয় সিজদার মধ্যে অথবা তাশহুদ পড়িবার সময়ে কুকুরের ন্যায় বসা ।
২৪) দুই হাতে মাটি ভর দিয়া উঠা ।
২৫) কোন সুন্নত পরিত্যাগ করা ।

নামাজ ভঙ্গের কারন সমূহ হল –

  1. নামাজে কিরাত ভূল পড়া ।
  2. নামাজের ভিতর কথা বলা
  3. কোন লোককে সালাম দেওয়া
  4. সালামের উত্তর দেওয়া
  5. ঊহ-আহ শব্দ করা
  6. ইচ্ছা করে কাশি দেওয়া
  7. আমলে কাছীড় করা যেমন- মোবাইল বন্ধ করা বা দীর্ঘ সময় নিয়ে শরীর চুলকানো, ইত্যাদি, তবে এক হাত দিয়ে মোবাইল সাইলেন্ট করা যাবে
  8. বিপদে অথবা বেদনায় শব্দ করে কাঁদা
  9. তিন তাছবীহ পড়ার সময় পরিমাণ সময় ছতর খূলে থাকা
  10. মূকতাদী ছাড়া অন্য কারো থেকে নামাজ সম্পর্কিত কোন শব্দ গ্রহণ করা
  11. নাপাক জায়গায় সিজদাহ করা
  12. কিবলার দিক হতে সিনা ঘুরে যাওয়া
  13. নামাজে কুরআন শরীফ দেখে পড়া
  14. নামাজে শব্দ করে হাসা
  15. হাঁচির উত্তর দেওয়া
  16. নামাজে খাওয়া অথবা পান করা
  17. ইমামের আগে দাঁড়ানো

বিতরের নামায পড়িবার নিয়ম


এশার নামায পড়িবার পর বিতরের তিন রাকাআত নামায পড়িতে হয়, ইহা ওয়াজিব। পুর্বে উল্লেখিত তিন রাকাআত বিশিষ্ট নামাযের মত বেতরের নামায পড়িবে। তবে তৃতীয় রাকাআতে সূরায়ে ফাতিহার পর অন্য কোন সূরা বা আয়াত পড়িয়া আল্লাহু আকবর বলিয়া উভয় হস্ত কান পর্যন্ত উঠাইয়া পুনঃ হাত বাঁধিয়া দোয়ায়ে কুনুত পড়িবে। তারপর রুকু সিজদা ইত্যাদি যথারীতি আদায় করিয়া নামায শেষ করিবে।
রমজান মাস ব্যতীত সকল সময়ে বিতরের নামায একা একা এবং নিঃশব্দে পড়িতে হইবে। রমজান মাসে এই নমায জামায়েতের সাথে আদায় করা মুস্তাহাব। রমজান মাসে তারাবীর নামায শেষে ইমাম সাহেব প্রত্যেক রাকাতেরই সজোরে কেরাতে পাঠ করিবে এবং তৃতীয় রাকাআতে ইমাম সাহেব কেরাআত শেষ করিয়া সশব্দে “আল্লাহু আকবর” বলিয়া কান পর্যন্ত হাত উঠাইয়া পুণরায় তাহা বাঁধিবে।
মোক্তাদিগণ চুপে চুপে শুধু ইমামের অনুকরণ করিবে। হাত বাঁধিয়া সবাই চুপে চুপে দোয়ায়ে কুনুত পড়িবে। পরে যথাবিহিত ইমাম সাহেব রুকু, সিজাদা, তাশাহুদ, দরূদ পড়িয়া ছালাম করিয়া নামায শেষ করিব, মোক্তাদিগহণও তাহার অসনুসরণ করিবে।
যদি কেহ দোয়ায়ে কুনুত না জানে তবে না শিখা পর্যন্ত সে দোয়য়ে কুনুতের স্থলে নিম্নেক্ত দোয়া পড়িবে।
উচ্চারনঃ রাব্বানাআতিনা ফিদ্দুনিয়া হাছানাতাও ওয়াফিল আখিরাতে হাচানাতাও ওয়াকিনা আজাবান্নার।
অথবা, তিন বার আয় আল্লাহ আমাকে মাফ কর, পড়িবে অথবা তিন বার (আল্লাহুম্মাগ ফিরলী, ইয়ারাব্বী) অর্থৎ হে আমার পতিপালক পড়িবে। কিন্তু সাবধান দোয়ায়ে কুনুত শিখিতে বিলম্ব মোটেও করিবে না।

জুমআর নামায ফরয হওয়ার শর্ত

যে যে শর্ত সমূহের কারণে জুমআর নামায পাড়া ফরয হয়
১) মুকিম অর্থাৎ স্থায়ী বাসিন্দা হইতে হইবে । মুসাফিরের উপর জুমআ ফরয নহে । আদায় করিলে জোহরের ফরয আদায় হইবে ।
২) স্বাধীন ব্যক্তি, ক্রীত দাসের উপর ফরয নহে ।
৩) সুস্থ অবস্থায় থাকা ।
৪) পুরুষ হওয়া ।
৫) বালেগ হওয়া ।
৬) চলিবার শক্তি বর্তমান থাকা ।
৭) সজ্ঞান হওয়া ।
৮) দৃষ্টি শক্তি থাকা ।

জানাযার নামাজ

কবর যিয়ারতের বিবরণ
মৃত ব্যক্তিগণের রুহের মাগফিরাত ও তাহাদের মঙ্গল কামনার জন্য কবরস্থানে উপস্থিত হইয়া সালাম দেয়া এবং দোয়া দরুদ ও কোরানের সূরা কেরাআত ইত্যাদি পাঠ করিয়া আল্লাহপাকের নিকট প্রার্থনা করাকে যিয়ারত বলে। কবর যিয়ারত দ্বারা যিয়ারত কারীর অনেক ফায়েদা হাছিল হয়, ইহাতে তাহার মনের ধর্মভাব এবং মৃতু্যর কথা জাগরিত হয়।
স্ত্রীলোকগণও কবর যিয়ারত করিতে পারেন। যদি তাঁহাদের বাপ-মার কবর এমন স্থানে থাকে যেখানে বেগানা পুরুষের কবর নাই তাহা হইলে উহা যিয়ারত করিতে পারেন।
কবর যিয়ারতের নিয়ম
কবর যিয়ারতের নিয়তে কবরস্থানে উপস্থিত হইয়া পশ্চিম দিকে পিঠ করিয়া কবরের দিকে ফিরিয়া দন্ডায়মান হইবে। তারপর সর্ব প্রথম কবর যিয়ারতের দোয়া বা সালাম পাঠ করিবে। তারপর বিস্মিল্ললার সাথে ক্রমান্বয়ে সূরা তাকাছুর, সূরা ফীল, সূরা কুরাইশ, চারকুল, আয়াতুল কুরছি এবং সম্ভব হইলে সূরা ইয়াসিন পড়া যায় আরও অধিক পড়িলে বেশী ভাল কথা।
কবর যিয়ারতের দোয়া
اَلسَّلاَمُ عَلَيْكُمْ يَا اَهْلَ الْقُبُوْرِ مِنَالْمُسْلِمِيْنَ وَالْمُسْلِمَاتِ وَالْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ – اَنْتُمْ لَنَا سَلْفَ وَنَحْنُ لَكُمْ طَبَعٌ وَاِنَّا اِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لاَ حِقُوْنَ يَرْحَمُ اللهُ الْمُسْتَقْدِ مِيْنَ مِنَّا مِنَ الْمُسْتَا خِرِيْنَ نَسَئَلُ اللهَ لَنَا وَلَكُمْ وَيَرْحَمُنَا اللهُ وَاِيَّا كُمْ –اَمِيْنَ
উচ্চারণ ঃ আচ্ছালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল ক্কুবুরে মিনাল মুসলিমিনা, ওয়াল মুসলিমাতি, ওয়াল মু’মিনীনা ওয়াল মুমিনাতে আনতুম লানা সালফা ওয়ানাহনু লাকুম তারাউ ওয়া ইন্না ইনশায়াললাহু বেকুম লা-হেকুউনা ইয়ারহামুললাহুল মুস্তাক্কদেমীনা মিন্না মিনাল মুস্তাখেরীনা। নাসায়ালুললাহা লানা ওয়া লাকুম ওয়াইয়ারহা মুনাললাহু ওয়া ইয়্যাকুম-আমীন।
সূরা কেরাআত এবং এই সমস্তের ছওয়াব মৃতের রুহের প্রতি বখশিষ করিয়া দিবে।

কবরস্থানে  নিবার বিবরণ

মৃতদেহের খাঁটিয়া কবরস্থানে লইয়া যাওয়া ফরযে কেফায়া। কোন এক প্রশস্ত অথচ পবিত্র স্থানে বসিয়া জানাযার নামায আদায় করিয়া লাশ বহন করিয়া কবরস্থানে লইয়া যাইবে।
মৃত ব্যক্তির চার জন পরহেজগার নিকট আত্মীয় লাশের খাটের চারটি পায়া ধারণ করিয়া কাঁধে উঠাইয়া লইবে।
লাশের মাথা সম্মুখে রাখিয়া চলিতে থাকিবে। কবরস্থান বেশী দূরে হইলে মাঝে মাঝে খাট বহনকারীগণ স্থান পরিবর্ত করিয়া স্ব-স্ব কোণা হইতে বিপরীত কোণায় গিয়া খাঁট ধারণ করিবে।
লাশ কোন ক্ষুদ্র শিশুর হইলেও একজন লোকে ও ছোট খাঁটে বহন করিবে না।
কবরস্থানে পেঁৗছাইয়া কবরের পশ্চিম পাশ্বর্ে জানাযার খাট উত্তর মুখী করিয়া নামাইয়া রাখিবে।

লাশ কবরে শোয়াইবার দোয়া

উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহি ওয়া আলা মিললাতি রাসূলিললাহি।

অনুবাদঃ আললাহপাকের নামে ও তাঁহার রাসূলের মাযহাবের (ধর্মমত) উপর (ইহাকে) সোপর্দ করিলাম।

মুর্দা কবরে শোয়াইয়া দিবার পর উহার উপরিভাগে বাঁশ অথবা অন্য কোন গাছ একখানার সাথে আর একখানা গায় গায় মিলাইয়া স্থাপন করিবে। বাঁশ বিছান হইলে উহার উপরে চাটাই, কলাপাতা, হুগলা অথবা অন্য কোন বস্তু বিছাইয়া দিবে। তারপর মাটি দ্বারা উহা ভাল করিয়া আটকাইয়া দিবে। প্রথমে পাঠ করিবে এবং এক এক মুষ্টি মাটি কবরে দিবেঃ
১।مِنْهَاخَلَقْنَاكُمْ মিনহা খালাক্কনাকুম। অর্থাৎ ইহাতেই তোমাদিগকে সৃষ্টি করিয়াছি।
২।وَفِيْهَا نُعِيْدُ كُمْ ওয়া ফিহা নুয়ীদুকুম। অর্থাৎ(আবার) ইহাতেই তোমাদিগকে প্রত্যাবর্তন করাইব।
৩।وَمِنْهَا نُخْرِجِكُمْ تَارَةً اُخْرَى ওয়ামিনহা নুকরিজুকুম তারাতান উখরা। অর্থাৎ (পুনর্বার) ইহা হইতে তোমাদিগকে বহির্গত করিব।
এইভাবে তিন মুষ্টি করিয়া মাটি দিবার পর প্রথমে কবরের মাথার দিক হইতে (উত্তর দিক) কোদাল দ্বারা বেশী করিয়া মাটি টানিয়া দিতে থাকিবে। কবরের চারিদিকে নীচু রাখিয়া মধ্যস্থান এক বিঘতের একটু বেশী পরিমান উঁচু করিবে। ইহার চতুর্দিকে চারিটি কোণের সৃষ্টি না করিয়া সমস্ত কবরটিকে একটি মাছের পিঠের ন্যায় আকৃতি বানাইয়া দিবে। কবরের দুই দিকে লাশের মাথা ও পা বরাবর জোড়া করিয়া দুইখানি ডাল পুঁতিয়া রাখিবে।

কবর খনন ও দাফনের বিবরণ

কবর দৈর্ঘ্য লাশ অপেক্ষা কিছু বড় এবং প্রস্থ দৈর্ঘ্যর অন্ততঃ অর্ধেক পরিমাণ খনন করিবে। গভীরতায় বুজ অথবা নাভী সমান করিবে। কবর সাধারণতঃ দুই রকম করা হয়। (১) শক কবর (খাড়া কবর) এবং (২) লহদ কবর।
শক কবর হইলে উপর হইতে একেবারে খাড়া ভাবে সোজা নীচের দিকে বরক অথবা নাভী পর্যন্ত খনন করা। এই প্রকার কবর হইতে অনেক সময় বন্য জন্তুরা লাশ টানিয়া উপরে উঠাইয়া ফেলে। কাজেই ইহা মোটেই নিরাপদ নয়।
লহদ কবর হইল উপর হইতে কিছুদূর পর্যন্ত খাড়া ভাবে খনন করিয়া তারপর এক পাশ্বর্ে বাকা করিয়া মাটির নীচে এই পরিমাণ স্থান খনন করতে হবে যাহাতে সচ্ছন্দে একটি লাশ তার মধ্যে শোয়াইয়া রাখা যায়। এই প্রকার কবর হইতে কোন জানোয়ার কতর্ৃক লাশ আক্রান্ত হইবার ভয় থাকেনা। বর্তমানে প্রায় সব দেশেই এই জাতীয় কবরই বেশী খনন করা হয়ে থাকে।

জানাযা নামাযের কিছু মাছালা

জানাযার নামাযের ইমাম যদি ভুলবশতঃ দুই তাকবীর বলিয়া সালাম ফিরাইয়া থাকেন তবে আবার দুই তাকবীর বলিয়া সালাম ফিরাইবেন। এইরূপ তিন তাকবীর বলিয়া সালাম ফিরাইলে পুনরায় এক তাকবীর বলিয়া ছালাম ফিরাইবেন।
ইমাম ভুলে পাঁচ তাকবীর বলিলে মোক্তাদিগণ চারি তাকবীর পর্যন্ত বলিয়া চুপ করিয়া দাঁড়াইয়া থাকিবেন এবং ইমামের সংঙ্গে একত্রেই সালাম ফিরাইবে। কোন লোক জানাযার নামাযে ইমামের কয়েকটা তাকবীর না বলার পর আসিয়া শরীক হইলে সে তাহরীমার তাকবীর না বলিয়া কিছু সময় ইমাম যখন তাকবীর বলিবেন অমনি তাহার সহিত তাকবীর বলিয়া নামাযে শরীক হইয়া যাইবে। ইহাই তাহার জন্য তাকবীরে তাহরিমা হইবে। তারপর যে তাকবীরগুলি ইমামের সংগে না পাইয়াছে তাহাই বলিবে। তাহাকে আর কিছুই পড়িতে হইবে না।
কোন লোক ইমামের চার তাকবীর হইয়া যাওয়ার পর নামাজে শরীক হইলে সে ইমামের সালাম ফিরাইবার পরে শুধু তাকবীর গুলো বলিয়াই সালাম ফিরাইবে।
কাহারও মৃতু্য সংবাদ শুনিয়া দূরবর্তী এলাকায় তাহার জন্য গায়েবানা নামায পড়িলে জায়েয হইবে।
কোন লোককে জানাযার নামায ব্যতীত দাফন করিলে তাহার উপরে তিনদিন পর্যন্ত জানাযার নামায পড়া জায়েয আছে।
কোন সন্তান মৃত ভূমিষ্ট হলে তাহার জন্য জানাযার নামায পড়িতে হয় না।
মসজিদের অভ্যন্তরে জানাযার নামায পড়া মাকরূহ।
কেহ জানাযা নামাযের দোয়া না জানিলে সে শুধু “আললাহুম্মাগ ফেরলিল মুমিনীনা ওয়াল মুমিনাতে” এইটুকু বলিবে।

কাযা নামাজ


কাযা নামাযের নিয়্যাত

কাযা নামায এবং ওয়াক্তিয়া নামাযের নিয়ত একই রকম তবে এইটুক পার্থক্য যে কাযা নামাযে (আন উসালি্লয়া) শব্দের জায়গায় (আন আকদিয়া) এবং যে নামায তাহার নাম বলিয়া (আল ফাইতাতে বলিতে হইবে। যথা- আছরের নামায কাযা হইলে নিম্নরূপ নিয়ত বলিবেঃ
نَوَيْتُ اَنْ اَقْضِىَ لِلَّهِ تَعَا لَى اَرْبَعَ رَكْعَاتِ صَلَوةِ الْعَصْرِ الْفَا ئِتَةِ فَرْضُاللَّهِ تَعَا لَى مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِالشَّرِيْفَةِ اَللَّهُ اَكْبَرُ
উচ্চারণঃ নাওয়াইতুয়ান আকদিয়া লিল্লাহি ত’আলা আরবায়া রাকাআতি ছালাতিল আছরিল ফায়েতাতি ফারযুল্লাহি তা’আলা মোতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।

কাযা নামায পড়িবার নিয়ম

যে কোন জরুরী কারণে সময়মত নামায পড়তে না পারিলে ঐ নামায অন্য নামাযের পূর্বে আদায় করাকে কাযা নামায বলে। কাযা নামায দুই প্রকার যথা ।
১) ‘ফাওয়ায়েতে কালীল’ অর্থাৎ অল্প কাযা পাঁচ ওয়াক্ত পরিমাণ নামায কাযা হইলে উহাকেই ‘ফাওয়ায়েতে কালীল’ বা অল্প কাজা বলে।
২) ‘ফাওয়ায়েতে কাছির’ অর্থাৎ বেশি কাযা। পাঁচ ওয়াক্তের অধিক যত দিনের নামাযই কাযা হউক না কেন উহাকে ‘ফাওয়ায়েতে কাছির’ বা অধিক কাযা বলা হয়। এ ধরনের কাযা নামায সকল ওয়াক্তিয়া নামাযের পূর্বে পড়িবে ।
কিন্তু,
(ক) কাযার কথা ভুলিয়া গেলে অথবা
খ) ওয়াক্তিয়া নামাযের ওয়া্কত সস্কীণৃ হইয়া গেলে বা
গ) কাযা পাঁচ ওয়াক্তের বেশী হইলে কাযা নামায পরে পড়া যাইতে পারে।
পাঁচ ওয়াক্ত নামায বা তার কম নামায না পড়িয়া থাকিলে তাহার তরতীবের প্রতি লক্ষ্য রাখিতে হইবে। আগের নামায আগে, পরের নামায পরে পড়িতে হইবে। যথঃ কোন ব্যক্তির ফরজ এবং যোহরের নামায তরক হইয়া গিযাছে; এখন আছরের নামায পড়িবার পূর্বে সর্ব প্রথম ফজরের কাযা তারপর যোহরের কাযা আদায় করিতে হইবে। তারপর আছরের ওয়াক্তিযা নামায আদায় করিবে।
১) ফরয নমাযের কাযা ফরয।
২) ওয়াজিব নামাযের কাযা ওয়াজিব।
৩) সুন্নত নামাযের কাযা পড়িতে হয় না। কিন্তু ফজরের সুন্নতের কাযা আদায় করিতে হইব।
৪) কাযা নামায জামায়াতের সহিত আদায় করিলে ইমাম কেরাত জোরে পড়িবেন। তবে যোহর এবং আছরে চুপে চুপে পড়িবেন।
৫) এক মাস বা তার চেয়ে বেশী দিনের নামায কাযা হইয়া থাকিলে উক্ত পরিমাণ সময়ের কাযা আদায় করিবে এবং তরতীবের প্রতি লক্ষ্য রাখিবে।
৬) জীবনে যে নামায পড়ে নাই বা কত নামায তরক করিয়াছে তাহার হিসাবও নাই। সে যদি এখন কাযা করিতে চায়, তবে প্রথমে নামাযের পূর্বে তরতীব অনুযায়ী কাযা আদায় করিতে থাকিব, ইহাকে ‘ওমরী কাযা’ বলে। ইহাতে অশেষ ছওয়াব আছে।
কাযা নামাযের নিয়ত করিবার সময় নামাযের উল্লেখ করিয়া নিয়ত করিতে হইবে।
بِسْمِ اللهِ وَ عَلَى مِلَّةِ رَسُوْلِ اللهِ-