মানচিত্রে টেকটনিক প্লেট


এটি পৃথিবীর মানচিত্র। পৃথিবী যদিও একটি গোলক তারপরও এর উপরিভাগের মানচিত্র এভাবে সমতল হিসেবে ব্যবহার করা সুবিধাজনক। ছবিতে মোটা কালো রেখা দিয়ে যেই সীমানাগুলো পৃথক করা হয়েছে সেগুলো টেকটনিক প্লেটএর সীমা। পৃথিবীর উপরে একটি কঠিন পাতলা ত্বক আছে (crust) ৩০ থেকে ৫০ কিলোমিটার পুরু। এর নিচে মোটা উত্তপ্ত ও গলিত স্তরটি ম্যান্টেল। উপরের পাতলা ত্বকটি নিরবচ্ছিন্ন নয় বরং বিভিন্ন খন্ডে ভাগ হয়ে টেকটনিক প্লেটগুলো তৈরি করেছে। এই প্লেটগুলো নিচের গলিত ম্যান্টেলের উপর অনেকটা ভাসমান ধরা যায়। এবং এগুলো খুবই ধীরে ধীরে ভেসে ভেসে কোটি কোটি বছর ধরে একস্থান থেকে আরেক স্থানে চলেও যায়। এবং এর ফলে এরা প্রায়ই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় (তীর চিহ্ন দিয়ে প্লেটগুলোর গতির দিক দেখানো হয়েছে)। অনেক সময় সংঘর্ষের স্থান উঁচু হয়ে পর্বত তৈরি হয়, অনেক সময় একে অপরের নিচে ঢুকে যায়। তবে যেহেতু এটি খুব ধীর প্রক্রিয়া তাই আমরা স্বাভাবিকভাবে তা বুঝতে পারি না। আমরা বুঝি যখন সংঘর্ষে দীর্ঘদিনের কোনো গতিময়তার কারণে হঠাৎ করে ঝাঁকুনি ইত্যাদি তৈরি হয় তখন। অনেক সময় পাহাড়ের উপর বড়বড় পাথর সুদীর্ঘ সময় স্থিতিশীল থাকার পরেও ভুমিক্ষয় ইত্যাদির ফলে যেমন হঠাৎ একদিন ধ্বস নামে বিষয়টি তেমনই। এই টেকটোনিক প্লেটগুলো কোনো কারণে কেঁপে গেলে সেটি ভুমিকম্প হিসেবে অনুভুত হয়। যেহেতু প্লেটগুলো বিশাল বিশাল এবং সংঘর্ষগুলো হয় প্লেটের কিনারা বরাবর তাই পৃথিবীর সবএলাকা ভুমিকম্পপ্রবণ নয় বরং এর প্লেটের কিনারা বরাবর এলাকাগুলোই বেশী ভুমিকম্প প্রবণ। বাংলাদেশের অবস্থান লক্ষ্য করলে দেখবেন এর উপরের দিকে দুটি প্লেটের একটি সংযোগস্থল পার হয়ে গেছে। মূলতঃ এই সংযোগস্থলের নিচের প্লেটটি উপরের প্লেটটিকে ধাক্কা দিতে দিতেই হিমালয় পর্বতমালা তৈরি করেছে। এই এলাকাটি তাই ভুমিকম্পপ্রবণ এলাকা হিসেবে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এই এলাকায় মাঝেমাঝে ছোট বড় মাঝারি ইত্যাদি কম্পন অনুভুত হবে। তবে বাংলাদেশ অধিকাংশ অঞ্চল পুরোপুরি প্লেটের সংযোগস্থলে পড়েনি বলে খুব বড় ধরনের ঝাঁকুনির সম্ভবনা এখানে কিছুটা কম, তবে মাঝারী মানের কম্পনও বাংলাদেশে বড় ধরনের ক্ষয়-ক্ষতি সৃষ্টি করার জন্য যথেষ্ঠ। নেপাল, ভারত ও পাকিস্তানের বিরাট অংশ এই প্লেটের সংযোগস্থলের সরাসরি উপরে অবস্থান করছে।
এটাই ভুমিকম্পের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। ভুমিকম্প প্রতিরোধ ও প্রতিকার করতে হলে এই ব্যাখ্যা মেনেই তা করতে হবে। এবং এই ব্যাখ্যা আমলে নিয়েই ভুমিকম্প হতে সবচেয়ে বেশী নিরাপত্তা তৈরি করা যাবে। কেউ যদি ভুমিকম্পের অন্য কোনো ধরনের উদ্ভট, বানোয়াট, অজগুবি ও অবৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হাজির করার চেষ্টা করে তাহলে সেটি ভুমিকম্প হতে নিরপত্তার জন্য হুমকী সৃষ্টি করতে পারে এবং তাই জনগোষ্ঠীর ভয়াবহধরনের ক্ষতিও করতে পারে। এইজাতীয় অপব্যাখ্যা দানকারী ব্যাক্তিবর্গকে তাই শাস্তিরও আওতায় আনাও বিবেচ্য হতে পারে।

No comments:

Post a Comment