ভুতত্ত্ব বিভাগের ছাত্র ছাত্রীরা চাকরির বাজারে অবহেলিত কেন?


বাংলাদশে ভূ-তত্ত্ব নিয়ে পড়াশুনার জায়গা খুব সীমিত। অতি অল্প পরিসরে দেশের তিনটি বড়ো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে পড়ানো হচ্ছ। ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় চল্লিশ বছর ধরে ভূ-তত্ত্ব বষিয়ে চার বছর ও পাঁচ বছর মেয়াদী স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী প্রদান করা হয়। এ বষিয়ে যারা পড়াশুনা করে তাদের শিক্ষাজীবন শুরু হয় চরম হতাশার মধ্য দিয়ে। কেননা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওরিয়েন্টেশন বা শুরুর দিন থেকে সংশ্লষ্টি বিভাগের শিক্ষকেরা এ বিভাগে পড়াশুনা নিয়ে ও পাশ করার পর চাকরির বাজার নিয়ে চরম হতাশার কথা শুনান। প্রথমে শুনতে খারাপ শুনা গলেওে পাশ করার পর বাস্তবতায় দখো যায় আট বছর আগে শিক্ষকদের কথা ঠিক ঠাকমতো ফলে যাচ্ছে। চাকরির বিজ্ঞাপনে কোথাও জিওলজির কোন সুযোগ রাখা হয়না। বাপেক্সে, জিএসবি, পেট্রোবাংলা, পরমানু কমিশনের নিয়োগে জিওলজির ছাত্রছাত্রীরা চাকরির সীমিত সুযোগ পেয়ে থাকে। অনেকে অনকে ভালো রেজাল্ট করেও জিওলজির ফিল্ডে চাকরি না পেয়ে বাধ্য হয়ে ব্যাংকে জব করে। যা তাদের সারাজীবনের মনোবদেনার কারণ হয়ে থাক। পরিবেশ বিজ্ঞান ও ভূগোলের ছাত্রছাত্রীদের জব মার্কেটে যতো সুযোগ আছে তা জিওলজির ক্ষেত্রে নইে। পরিবেশ বিজ্ঞান ও ভূগোলের ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশগ্রহন করার সুযোগ রয়েছে। তারা নিবন্ধন পরীক্ষায় মাধ্যমে বেসরকারী কলেজগুলোতে শিক্ষকতার সুযোগ পায়। কিন্তু জিওলজির ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষক নিবন্ধনে অংশগ্রহন করতে পারেনা। জিওলজির ছাত্রছাত্রীরা অনায়াসে পরিবেশ বিজ্ঞান ও ভূগোল বিষয়ে পাঠদান করাতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগগুলোতে জিওলজির শিক্ষক নিতে হয়। যেখানে জিওলজির ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশ বিজ্ঞান বভিাগে শক্ষিকতা করছে অথচ কলেজগুলোতে তারা নিবন্ধনে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। এটা এক ধরনের বৈষম্য। এ বৈষম্যের অবসান হওয়া জরুরি।

গবেষণার চারনক্ষেত্র ভূতত্ত্ব। প্রাকৃতিক সম্পদ, খনিজ সম্পদের মতো দুরুহ বিষয়ে ভূতত্ত্ববিদের অবদান স্বীকৃত। যা শিক্ষা জীবনের শুরু থকেইে খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদের আধার, ভুপ্রাকৃতিক অবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে ব্যবহারিক জ্ঞান র্অজন করতে হয়। বলা হয়ে থাকে, পৃথিবী নামক গ্রহটির রহস্যাবৃতে আবিষ্কার ও কসমোলজিতে ভূতত্ত্ববিদের অবদান বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত। কসমোলজি, আস্ট্রনোলজি জিওলজিরই অংশ। পৃথিবী উৎপত্তির গুঢ় রহস্যই জিওলজস্টিদের নিয়মিত গবষেণার বিষয়। আমাদরে মতো দেশে জিওলজির উপর পড়াশুনা করা কঠিন। যে পরিমান সুযোগ থাকার দরকার তা আমাদের দেশে নেই। তবুও স্বল্প পরিসরে জিওলজির যতোটুকু র্চচা হয় তাও পৃষ্ঠপোশকতার অভাবে বিশ্ববদ্যিালয়গুলোতে অনকে সময় সম্ভব হয়না। বাংলাদশের জিওলজিস্টদের র্ঈষনীয় সাফল্য রয়েছে। বাপেক্সের জিওলজিস্টরা এদেশের গ্যাসক্ষত্রেগুলো আবিস্কারে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর বাংলাদেশের কয়লা সম্পদের আবিষ্কারক। বালিতেও মূল্যবাণ র্অথকরী খনিজ রয়েছ এই ধারণাও জিওলজিস্টদের গবেষণার ফসলেরই অংশ যা র্বতমানে ব্যাপক র্কমপরকিল্পনা নিয়ে সরকার এগোচ্ছে। কক্সবাজারের বালিতে কালো বালির উপস্থিতি দেখে একে র্অথকরী খনিজ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছিল স্বাধিনতারও কয়েক বছর আগে যা পরর্বতীতে কালো সোনা হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করছে। জিওলজিস্টদেরকে অনেক জায়গায় কাজে লাগানো যেতে পার। সড়ক ও জনপথের নিজস্ব জিওলজিস্ট থাকা দরকার এবং এ সংখ্যা কোনক্রমইে প্রকৌশলীদের চেয়ে কম হওয়া উচিত নয়। মাটির গুনগত মান পরীক্ষা ও তদসংক্রান্ত প্রতিবেদন ভূকাঠামো ভিত্তিকি না হলে স্ট্রাকচার নির্মাণ কোনো কাজে আসবেনা। ইঞ্জিনিয়াররা ইঞ্জিনিয়ারিং দৃষ্টিকোণ থেকে মাটির Strength বা শক্তি পরিমাপ করে যেখানে ভূতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ থাকা আবশ্যক কিন্তু পরিতাপের বিষয় সেসব জায়গায় ভূতত্ত্বকে অবহেলা করা হয়। প্রত্যকে থানা, উপজলো ও জেলাভিত্তিকি ভূতত্ত্ববদি বা বৈজ্ঞানকি র্কমর্কতা (জিওলজি) পোস্ট সৃষ্টি করা যেতে পারে। যদি প্রতিটি উপজেলায় জিওলজিস্টদের পদায়ন করা যায় তবে একদিকে যেমন জিওলজির রুদ্ধ দ্বার উম্মুক্ত হবে অন্যদিকে সরকার এসব র্কমর্কতাদের দিয়ে উপজলো র্পযায়ে ভূ-অবকাঠামোগত গবেষণার কাজটি করিয়ে নিতে পারবে। কারণ উপজেলা র্পযায়ে সরকারি ভাবে যে পরিমান উন্নয়ন র্কমকান্ড হয় তার কোন গবেষণাধর্মী নথি সরকারের কাছে নেই, শুধুমাত্র প্রকৌশল রের্কড ছাড়া। উপজেলা র্পযায়ে যদি মৎস্য, পশুসম্পদ র্কমর্কতা, পানি উন্নয়ন র্কমর্কতা, প্রকৌশল র্কমর্কতা থাকতে পারে তবে ভূ-বজ্ঞৈানকি র্কমর্কতার কোন পোস্ট থাকবেনা কেন?
বাংলাদেশে ল্যান্ড ডেভেলপম্যান্ট কোম্পানীগুলোর পরিধি দিন দিন বাড়ছে, সরকার যদি আন্তরিক হয় তবে এসব ব্যবসায়ীদরেকে বাধ্যতামুলকভাবে জিওলজিস্ট নিয়োগ করাতে পারে। কারণ একটা জায়গা ভরাট করে সেখানে উঁচু দালান তৈরি কতোটা প্রকৃতিবান্ধব তা জিওলজিস্ট ছাড়া অন্যকেউ বলতে পারনা। কারণ নির্মাণাধীন ভবনটির ভূকাঠামোগত বৈশিষ্ট্য ও ভূকম্পন প্রবণ কিনা তা ভূতত্ত্বের কাজ। কিন্তু সেসব কোম্পানীতে ভূতত্ত্ববিদদের জন্য কোন পদায়নের ব্যবস্থা নেই। সরকার একটু উদ্যোগি হলেই এসব জায়গায় সহকারী ভূতত্ত্ববিদের পোস্ট সৃষ্টি করতে পারে। নব্য গঠিত রুপপুর পারমানবিক জ্বালানি প্রকল্পে ভূতত্ত্ববিদের অধিকসংখ্যক পোস্ট সৃষ্টি প্রয়োজন। কেননা পরিবেশ বিপর্যয় মোকাবেলা এখন একটি চ্যালেঞ্জ যা ভূতত্ত্ববিদ ছাড়া প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা আর কেউ নিতে পারবেনা। নদী গবষেণা ইন্সটিটিউটে কোন জিওলজিস্ট নিয়োগ দেয়া হয়না। নদী নিয়ে জিওলজিস্টদের যে পরিমাণ ব্যবহারিক জ্ঞান আহরণ করতে হয় তা অন্যকোন বিষয়ের কাউকে করতে হয়না। কারণ জিওলজির সঙ্গে নদীর সর্ম্পক সুগভীর। নদীর উৎসের সঙ্গে ভূত্বকের গঠন আকৃতির সর্ম্পক ওতোপ্রোতভাবে জড়তি। নদীর বহন করা পলি ও তা জমাট করার প্রকৃতি এর্ দুভদ্যে জটিল সমীকরন ভূতত্ত্বে যতোটা সাবলীল অন্যকোথাও তা ক্রমশ জটিল বিষয়। অতচ নদী গবষেণা ইন্সটটিউিটে জিওলজিস্টদের পদায়ন করা হয়না। বিআইডাব্লিউটি এ জিওলজিস্টদের জন্য কোন পোস্ট নেই। কেন নৌপথে কি জিওলজিস্টরা কাজ করতে পারেনা? নদীর ড্রাফট রক্ষণাবেক্ষনে জিওলজিস্টদের নিয়োগ দিয়ে দেখুন কতো ভালো কাজ করতে পারে ওরা। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে জিওলজিস্ট নিয়োগ দেয়া যেতে পারে। মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র স্পারসোতে জিওলজি ডিপার্টমেন্ট থাকা সত্ত্বেও সেখানে কোনো জিওলজিস্ট নাই। অত্যন্ত এমন দৃশ্য দেখা যাবেনা যে, ব্রীজ আছে রাস্তা নেই বা রাস্তা আছে কালর্ভাট নেই ফলে র্বষাকালে রাস্তা কেটে পানি প্রবশ্যতার ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। আসলে প্লানিংয়ের অভাবে যেপরমানে সরকারি র্অথের অপচয় হয় তা নিরসনে জিওলজিস্টরা মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে। যেকোনো কাজ করার আগে যদি প্রাকসম্ভাব্যতার যাচাইয়ের কাজটি জিওলজিস্টদের দিয়ে করানো যায় তবে সরকার তার বাজেটের অনেক টাকা অপচয়ের হাত থেকে বাচাঁতে পারবে।যা দিয়ে জিওলজিস্টদের বেতন ভাতা মেটানো যাবে জিওলজিস্টদের জন্য আলাদা বরাদ্দের প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন শুধু সরকারের উদ্যোগ নেয়ার মতো সুদৃষ্টি।
তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রি আপনি জিওলজিস্টদের জন্য যুগান্তকারী পদক্ষপে গ্রহণ করুন। সরকারী চাকুরিতে তাদের জন্য পদ সৃষ্টি করুন। তাদের র্কমসংস্থানে দেশের জন্য লাভ হব। টেকেনক্যিাল লোকদের নন-টেকেনিক্যাল কাজে ব্যবহার করে দেশ কিন্তু মেধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই দেশের র্স্বাথে সঠিক লোকদেরকে সঠিক জায়গায় ব্যবহার করতে হবে। তাতেই দেশের প্রকৃত মঙ্গল অন্তর্নিহিত রয়েছে।

No comments:

Post a Comment