জিওলজির ট্রিলজিঃ একটি বাস্তব উপাখ্যান

বিলাস জিওলজিতে পড়ে থার্ড ইয়ারে। পরীক্ষার মৌসুম চলছে। পরীক্ষার মৌসুম মানে বিলাস ছাড়াও আরও অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের বিভিন্ন ইয়ারের পরীক্ষা চলছে। তাই তার রুম এবং রুমের আশপাশের রুমগুলোতে কেমন পরীক্ষা পরীক্ষা পরিবেশ।

তাই সকলের চলাফেরা অতি সন্তর্পণে। এখন কেউ আর গলা জুড়ে গান গাইতে গাইতে বাথরুমে যায় না, আয়েশি কায়দায় শব্দ করে কেউ আর হাঁটে না। হলের মধ্যে এরকম দুর্লভ পরিবেশ একমাত্র একসাথে পরীক্ষার চাপের কারণে।
সন্ধার আকাশে চাঁদটা বেশ উজ্জ্বল। তাই বলে কি কারেন্ট চলে যাবে? তোরা এখানেও দ্বন্দ্ব করবি। প্রাকৃতিকের সঙ্গে কৃত্তিমতার দ্বন্দ্ব। এ দ্বন্দ্ব চিরন্তন। তাই উল্টাপাল্টা না ভেবে বিলাস দরজা জানালা খুলে দিলো, মিটিমিটি আলোর টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালালো। এই টেবিল ল্যাম্পটা সে ১০০ টাকা দিয়ে বানিয়েছে নষ্ট মোবাইলের ব্যাটারি দিয়ে। চাঁদের আলোর চেয়ে একটু উজ্জ্বল আলো বইয়ের উপর।
চেয়ারে বসে সে ফিল করছে, দখিনা হিমেল হাওয়া তার দরজা দিয়ে ঢুকে তাকে ছুঁইয়ে জানালা দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতির এরকম সেবায় সে মুগ্ধ। বিশেষত পরীক্ষার মধ্যে পড়তে পড়তে ফিদা হয়ে যাওয়া, পড়তে পড়তে খিদের কথা ভুলে যাওয়া, মোবাইলে কথা সংক্ষিপ্ত হওয়া- এ শুধু মাইনিং এ সম্ভব। অন্য  কেউ তা বুঝবে না।
বিলাস মনোযোগ দিয়ে পড়ছে, এমন সময় বন্ধু রুমনের ফোন।
রুমনঃ (মামা, কতদূর? )
বিলাসঃ এই তো মামা, ডাইনোসর ধরেছি ।
রুমনঃ (কতক্ষণ পড়বি ? )
বিলাসঃ একটা।
……………
দরজার সামনে দিয়ে বাথরুমে যাচ্ছিলো কামাল। সে এতক্ষণ বিলাসের কথাগুলো শুনছিলো। আড়িপেতে অন্যের কথা শোনা অপরাধ, কিন্তু বিলাসের কথার মধ্যে কী একটা সাসপেন্স খুঁজে পেয়েছে সে। প্রকৃতির চাপে বিলাসের শেষের কথাগুলো শুনতে পারেনি কামাল; কিন্তু যা শুনেছে তাই ভাবনার মধ্যে ডুবে থাকার জন্য যথেষ্ট।
কামাল ভাবছে। মামা-ভাগ্নে, একটা ডাইনোসর ধরা। আসলে কি এই ডাইনোসর? মামা ভাগ্নের মধ্যে কি এমন গোপন ব্যবসা তাকে জানতেই হবে।
এ জুগেতো ডাইনোসর থাকার কথা না, শুনেছি মানুষ আসার অনেক আগেই ওরা পটল তুলেছে,,ডাইনোসর কি তাহলে কোনো গোপন মুল্যবান জিনিসের সাঙ্কেতিক নাম! কোনো হীরে, মনি-মুক্তা, কিংবা প্রাচিন দামি মুদ্রা, কিংবা রাজবাড়ীর প্রাচিন শিব মূর্তি। যেগুলো আয়ত্তে আনলে এক্কেবারে কোটিপতি।
বিলাস ভাইতো খনিবিদ্যায় পড়ে। মাঝে মধ্যে শুনি কোথায় যেন যায় কি প্রোজেক্টে। তাহলে কি এমন কোনো গোপন খনির কথা জানতে পেরেছে।
ইত্যদি এলোমেলো ভাবনার মধ্যে শিহরিত সে। একেবারে বড়লোক হওয়ার একটা সুযোগ পেয়েছে সে।
ইতোমধ্যে কারেন্ট চলে এসেছে।
যেই ভাবা সেই কাজ। কামাল বাথরুম থেকে বের হয়ে বিলাসের রুমের উদ্দেশ্যে আসছে। দরজা খোলা ছিলো। দেখে, বিলাস পড়ছে। পড়ছেতো পড়ছে। জলপ্রপাতের মতো নিরন্তর সে পড়াশোনা।  কামালের চোখ পড়লো, বিলাশের ঘড়ে ঝুলন্ত একটা নোটিশের দিকে, পরীক্ষা চলছে, আসেন গল্প করি কামাল দেরি না করে তার রুমের দিকে রওনা হলো।
কিন্তু তার মাথার মধ্যে শুধু ঘুরপাক খেতে লাগলো ব্যাপারটি।

কামাল উদ্ভিদবিজ্ঞানে পড়ে। বিলাসের জুনিয়র। কিন্তু বিলাসের সঙ্গে তার ভাব বেশ ভালো। উদ্ভিদবিজ্ঞানে চান্স পাওয়ার আগে ভ্রমণ ভালো লাগতো না। কিন্তু ইদানিং বনে বাদাড়ে ঘুরতে ভালো লাগে। তার এই ভালোলাগা এনে দিয়েছে নাকী সব্যসাচী। মানে ফেলুদা। সে দারুণ ফেলুদার ভক্ত। তাইতো মাঝে মধ্যে নিজেকে ফেলুদা, কিংবা তপেশ ভাবতে ভাল লাগে। 

No comments:

Post a Comment