চাকরির বাজারে জিওলজি কোথায়?


অনেকদিন ধরে এ নিয়ে লিখবো লিখবো করে লেখা হয়না। আজ বাস্তবতার নিরিখে কিছু কথা বলবো- এ কথাগুলো শুধু আমার না, আপনার মনের ভিতরেও রয়েছে।


চাকরির বাজারে জিওলজি কোথায়?
মানছি জিওলজির স্টুডেন্টরা বসে নেই। হা, জিওলজি ছাড়া সব জায়গায় আছে। কিন্তু ঐ জায়গাটা অত্যন্ত করুণ। ওটা ওদের জায়গা না। ব্যাঙ্ক, মার্কেটিং, কোম্পানি ইত্যাদি। অনেককেই দেখেছি কোচিং সেন্টার দিয়ে বসেছে এবং সে স্বপ্ন দেখছে এর বিস্তৃতি নিয়ে। সে ধরে নিয়েছে জিওলজি থেকে কিচ্ছু হবে না। এরকম আরও অনেক উদাহরণ রয়েছে আমার কাছে।

তাহলে জিওলজি পড়ার কি দরকার ছিলো! বাংলা, সংস্কৃত, সঙ্গীত, ইতিহাস ইত্যাদি নিয়ে পড়লেই হতো।  আমরা যখন ক্লাস আর প্রাক্টিক্যালে জর্জরিত, দুপুরে ঘুম হারাম, গভীর রাত অব্দি Assignment, Class Test এর প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, সকালের ঘুম না ভাঙতেই সকালের ক্লাসের অ্যালার্ম; আর ওরা ক্যাম্পাসে কিনা আয়েশি জীবন কাটাতো।
আবার বিসিএস, অন্যান্য সরকারি চাকুরিতে ওরা এগিয়ে, ঠিক গোলআলু। গোলআলু যেমন সব তরকারীতে চলে, সব চাকুরিতে ঐ হাল্কা সাবজেক্ট ওয়ালাদেরকে দেখা যায়।
আবার ওদের মুখেই আমাদের ব্যঙ্গ করতে শুনি “ভুয়া তত্ত্ব ও খালি বিদ্যা” ; সম্ভবত. আমাদের এ বেহাল দশা ওদেরকে এরকম মজা দেয়।

আজ অনার্স করতে দুই বছর অতিরিক্ত লাগছে, মাস্টার্স করতে অতিরিক্ত একবছর লাগছে। বাংলা, ভূগোল, ইতিহাস ওয়ালারা হাসতে হাসতে ক্যাম্পাস ছেড়ে চাকুরিতে জোগদান করছে।
বড় লজ্জার কথা, ক্যাম্পাসে ঘুরতে লজ্জা লাগে। যাদের সাথে একসাথে ভর্তি হয়েছি তারা চলে গেছে, এখন পরিচয় দিতে হয় সেশন উল্লেখ করে, না হলে সহপাঠি- বন্ধু- জুনিয়র যে যেভাবে ভাবার সুযোগ পায়।
এলাকার লোকটি বাবাকে জিজ্ঞাসা করে, “আপনার ছেলে ফেল টেল করছে নাকি, এতো বছর লাগার কথা না ”; এ লজ্জা রাখবো কোথায়?
কর্তৃপক্ষ এর কোনো জবাব দিবে?

কৃষক পিতার অতিরিক্ত দুইবছরের জোগান দিবে, ফসলে লাভ না হলেও পিতাকে সেশন জটের সেশন ফি দিতে হয়, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের শোষণের রুপান্তর নয় কি? 
এ “লগন” আদায় হলেও বিয়ের “লগন” আর আসেনা। দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা শুধিতে হইবে ঋণ। 

শিক্ষকতা মহান পেশা, আমার পছন্দ দুটো কারণে, এক- হালাল রোজগার, সৎ- সচ্ছল জীবন যাপন, দুই- সমাজে সম্মান, মর্যাদা।
অথচ এই শিক্ষকতা পেশায় আমাদের কোনো সুযোগ নেই। নেই শিক্ষা ক্যাডারে পদ। বেসরকারি স্কুল কলেজেও নেই। দশম শিক্ষক নিবন্ধন চলছে, আমরা শুধু দেখেই যাচ্ছি।

এখন কথা হলো, স্কুল কলেজের একজন শিক্ষার্থীকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, Climate Change, Earthquake, Water Quality, Environment, Disaster ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় আমার বিশ্বাস তারা সদুত্তর দিতে পারবে না। অথচ এগুলো প্রত্যেকটিই জানা শিক্ষক ছাত্রের জন্য অতীব জরুরী বলার অপেক্ষা রাখে না। এগুলো নিয়ে মাধ্যমিকের সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ভুগোল অনুচ্ছেদে যা আছে তা যতার্থ নয়। আর এগুলো কি একজন জিওলজিস্ট পড়ান?

জিওলজি মানে জীবন-মরনের প্রশ্ন। বাস্তবতা- উপেক্ষিত।

আজ ভাষাবিজ্ঞানের ছাত্র বাংলার সাথে আবেদন করতে পারছে,
রাষ্ট্রবিজ্ঞান- সামাজিক বিজ্ঞান একীভূত করে নিয়োগ হচ্ছে,
তাহলে জিওলজিকে কেন ভূগোল, মৃত্তিকাবিজ্ঞানের সাথে নিয়োগ দেয়া যায়না?
তা না হলে আলাদা পদায়নের সৃষ্টি করা হোক!

সরকারি চাকরি আজ স্বপ্ন। ভালো রেজাল্ট করার পরও আল্টিমেট কয়েকলাখে ভাগ্য নির্ধারিত হয়।। বাপেক্স, পেট্রবাংলায় কয়টা সার্কুলার হয়? যখনি শুনি পেট্রবাংলার সার্কুলার হয়েছে, তখনি মনটা আনন্দে ভরে ওঠে, কিন্তু ম্লান হতে একটু সময় বেশি লাগে না যখন দেখি কমার্স ব্যাকগ্রাউন্ডের স্টুডেন্টের পদ বেশি।

একজনকে জিজ্ঞেস করলাম সে কোথায় পড়ে। বলল, সে “ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার”; বুঝতে পারলাম ইঞ্জিনিয়ারিং পরেও তাদের কেউ ইঞ্জিনিয়ার না বলার ক্ষোভ।
জীওলজি- একটা ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয় নিঃসন্দেহে। বুয়েটে পড়াচ্ছে, পলিটেকনিকে পড়াচ্ছে, কুয়েট, চুয়েটে পড়াচ্ছে। একি পড়া, একি সিলেবাসে আমরাও পড়ছি “জীব ও ভু বিজ্ঞান” অনুষদে। যেখানে রয়েছে উদ্ভিডবিদ্যা, প্রানি বিদ্যা...। সমস্যাতো গোড়াতেই।

অনেকেই এই বলে ক্ষান্ত হয়, রিজিক আল্লাহ যেখানেই রেখেছেন, সেখানেই সেখানেই হবে। আলবত শিওর, এটি বিশ্বাস করতে হবে, না হলে ঈমান থাকবেনা।

তাই বলে আমার অধিকার নিয়ে খেলা করার অধিকার কারো নেই।
ফেসবুক গ্রুপ পোস্ট  থেকে)