ভূতত্ত্ব প্রথম বর্ষঃ প্রস্তুতি ও পরামর্শ

প্রথমেই বসন্তের শুভেচ্ছা জানাই ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের নবাগত ভাইবোনদের। 

কয়েকদিন ধরে প্রথম বর্ষের অনেকেই আমাকে ফেসবুকে টেক্সট করছে তারা কিভাবে পড়াশুনা শুরু করবে, প্রস্তুতি নিবে, পরীক্ষায় ভালো করবে, কোন কোন বই ফলো করবে ইত্যাদি ইত্যাদি। বিশেষ করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সাবজেক্টটি নতুন বিধায় ওরা বেশি চিন্তিত, তাদের মেসেজ থেকে বুঝতে পারি। তাদের সচেতনতার জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।

ফার্স্ট ইয়ার ড্যাম কেয়ার বলে হয়তো অনেকেই তাদেরকে উপহাস করবে। কিন্তু একটা বিষয় স্মর্তব্য, জীবনের কোনো কিছুই ড্যাম কেয়ার হতে পারে না। জীবনটাঅনেক ছোট, ভালো কিছু করার সময় খুবই কম। আর সময়ের কাজ সময়ে না করলে পরে পস্তাতে হয়। জীবনের কঠিন মুহুর্তে তারা কিন্তু পাশে আসে না যারা সেই কঠিন অবস্থার জন্য দায়ী। সুতরাং সেদিকে কর্ণপাত না করে সামনে এগিয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ।

ফার্স্ট ইয়ার। একটা গোলকধাঁধানো সময়। চোখের সামনে ভেসে আসবে জৌলুস অনেক কিছুই। নতুন  ক্যাম্পাসনতুন পরিবেশ। নতুন বন্ধু। নতুন আইডিয়া। এতসব নতুনের ভীরে খেই হারিয়ে ফেলা অসম্ভব কিছু না।এখান থেকেই তৈরি হয় বাকী সময়টার পথচলা। তাই পথ চলতে হবে সন্তর্পণে। 
ক্লাশ শুরু করেছো ইতোমধ্যে। হয়তো অনেকের কাছে মনে হবে জিওলজি একটা নীরস বিষয়। কঠিন কিছু।


কোনো কিছুই কঠিন না। কঠিন আমরাই করি। আমাদের উপলব্ধি, আমাদের দর্শনআমাদের চিন্তার মধ্যেই যদি কাঠিন্যতা বিরাজ করে তাহলে সহজকে কীভাবে খুঁজে পাবো !
So,Be Easy, Think Simple. 

জিওলজি কোনো বিমূর্ত কোনো বিষয় না, পুরোপুরি প্রাক্টিক্যাল বিষয়। সুতরাং চিন্তা করতে হবে প্রাক্টিক্যালি।

এখন দেখে নেই প্রথম বর্ষে কোন বিষয়গুলো পড়ানো হয়। প্রথম বর্ষে সাধারণত যে বিষয়গুলো পড়ানো হয়ঃ
  • * Fundamental of Earth Resources
  • * Elementary Mineralogy
  • * Crystallography
  • * Sedimentology
  • * Computer Application in Geology
  • * Geological Mapping
  • * Physical Geology
  • * Geomorphology
  • * Historical Geology
বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে কিছুটা তারতম্য হতে পারে। শুরু করবে কিভাবে ।। জিওলজির ক্ষেত্রে আমার কিছু অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। 

তোমার মন নাই কুসুমঃ 


হ্যাঁ, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস "পুতুল নাচের ইতিকথা" যে পড়ো নাই সে বুঝবে না মন বোঝার কদর। 
এক এক স্যারের সাইকোলজি এক এক রকম। পছন্দের রয়েছে নানান বৈচিত্র্য। যেমনঃ অনেক স্যার নিজে একটা নোট তৈরি করবেন যেটাকে আমরা চোতা/চটি/শিট যাই বলি না কেন, ওটাই ক্লাশে এসে পড়াবেন, লিখাবেন। ওটা কিন্তু দিয়ে দিবেন না। সুতরাং ওর বাহিরে  লিখলে ভালো নম্বর পাওয়ার আশা করা যায়না। সেক্ষেত্রে ঐ নোটটাকে ফলো করতে হবে। আবার কোনো স্যার কিছুই নিয়ে আসবেন না। লেকচার দিয়ে চলে যাবেন। রেফারেন্স দিলে দিবেন। রেফারেন্স দিলে সেটাকে ফলো করতে হবে। আর না দিলে ইচ্ছেমতো ভালো বই থেকে নোট করে লিখলে ভালো নম্বর পাওয়া যাবে।


মোদ্দাকথা, কর্তার ইচ্ছাই কর্ম। স্যাররা যেভাবে চাচ্ছেন সেভাবে রিপ্রেজেন্ট করতে হবে। 

গ্রুপ ডিসকাশনঃ 


গ্রুপ ডিসকাশন হচ্ছে বৈজ্ঞানিক পড়াশোনার একটা সিস্টেম। এটাকে পাশ কাটিয়ে ভালো কিছু আশা করা খুব কষ্টের। প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন যদি বন্ধুরা বসে চর্বিতচর্বন করা হয়, তাহলে সেটা ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় এবং সেই বিষয়ে ভালো ধারণা পোক্ত হয়।

আবার যে কয়জন বন্ধু মিলে গ্রুপচর্চা করা হবে তারা সকলেই বিভিন্ন প্লান করে পড়তে পারলে খুবি ভালো। যেমনঃ স্যাররা যখন লেকচার দিবেন তখন সেই লেকচার লেখার চেয়ে শোনাটা বেশি জরুরী। আবার লেখাটাও গুরুত্তপুর্ণ। কিন্তু দুটো কাজ একসাথে করতে গেলে কোনটাই ভালো হবে না। সুতরাং যে লেখায় ভালো, সুন্দর এবং দ্রুত লিখতে পারে সে লেখার কাজটি সম্পন্ন করলো। সবাইকে লেখার দরকার নেই। পরবর্তীতে গ্রুপ ডিস্কাশনে এটা কাজে দিবে।

নোটকে সমৃদ্ধ করাঃ 


স্যাররা যে নোট থেকে লেকচার দেন তা অবশ্যই ভালো। কিন্তু যে লেকচার উঠাবে তার বানান ভুল কিংবা কোন বিষয় ক্লিয়ার না, সেক্ষেত্রে সেই নোটটাকে উন্নয়ন করতে হয়। এজন্য স্যারদের কাছে রেফারেন্স জিজ্ঞেস করতে হবে। সেই রেফারেন্স ধরে সেমিনার/লাইব্রেরিতে বই খুঁজে বের করে সেই নোটটাকে কারেকশান করতে হবে। এবং এটা একটি উন্নতমানের নোট হবে। ভালো রেজাল্টের ক্ষেত্রে এটুকু কষ্ট করতে হবে। 
তোমাদের সিলেবাসে রেফারেন্স বইয়ের উল্লেখ আছে। ঐ রেফারেন্স বইগুলো লাইব্রেরি সেমিনারে আছে। আবার কিছু বই আছে যেগুলো ফটোকপি করে রাখতে পারো যা সবসময় কাজে লাগবে। 
এ বইগুলো ঢাকার নীলক্ষেতেও পাওয়া যাবে। 
  1. 1. Rutley's Elemnt of Mineralogy- Reed, H.H
  2. 2. Physical geology- Spencer, E.W
  3. 3. Physical geology- Foster, R.J
  4. 4. Basic Concept of Historical Geology- Spencer, E.W
  5. 5. Essential of Earth History- Stokes, W.E
  6. 6. Sedimentary Rock- Pettijohn- F.J
  7. 7. Statistical analysis in the Geological sciences-Miller, R.L and Kahn, J.S
  8. 8. Manual of Field Geology- Comton, R.R
  9. 9. Geological Map - Simpson,B
  10. 10. Geology of Bangladesh - F.H Khan
  11. 11. Energy Resources of Bangladesh- Badrul Imam
  12. 12. বাংলাদেশের খনিজ সম্পদ - বদরুল ইমাম
ফার্স্ট ইয়ারে এই বইগুলো সচরাচর পড়ায়। ১, ১০, ১১, ১২ নং বইগুলো কপি করে / কিনে রাখতে পারো। সবসময় লাগবে। 
রাবিতে ভূতত্ত্ব বিভাগের সেমিনারে যে বইগুলো আছে এবং যে বইগুলো কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীতে আছে সবগুলোর কল লিস্ট একই। হাজার হাজার বইয়ের ভীরে তোমার নির্দিষ্ট বইয়ের পরিচিতি হচ্ছে কললিস্ট । কললিস্ট নাম্বার থেকে তুমি তোমার কাঙ্ক্ষিত বই পেতে পারো। আমি কললিস্টটি সংগ্রহ করেছি। এখান থেকে ডাউনলোড করতে পারোঃ কললিস্ট 

শুধুই কি থেওরিঃ 


না, শুধুই থেওরিতে ভালো করলে ওভারঅল ভালো হবে না। এজন্য সমান গুরুত্ব দিতে হবে প্রাক্টিক্যাল, ফিল্ডওয়ার্ক, ভাইভা এবং উপস্থিতি। থেওরির চেয়ে প্রাক্টিক্যাল, ফিল্ড, ভাইভাতে নম্বর পাওয়া যায় বেশি। এবং সেখানে নম্বর কর্তনের সুযোগ অনেক কম। 
আর সিলেবাস সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে পরিষ্কার। সিলেবাস হচ্ছে তোমার জন্য দলিল, আইন। তোমার প্রতি যাতে কোনোে অবিচার ভুলেও না হয় এর সমাধান তুমি নিজেই করতে পারবে যদি তোমার সিলেবাস সম্পর্কে ধারণা ক্লিয়ার থাকে। ইউনিট, ক্রেডিট, মার্ক্স ইত্যাদি বিষয়ে ক্লিয়ার ধারণা রাখবে। 

সমস্যা ও সমাধানঃ 


সমস্যা আছে সমাধান আছে। যে সমস্যায় পড়েনি সে ভালো কিছু আশা করতে পারেনা। পড়তে পড়তে অনেক সমস্যার উদ্ভব হবে। যেমনঃ টাইমস্কেল বিভিন্ন বইয়ে বিভিন্ন পাবা। এজ, ইরার মধ্যে কিছুটা পার্থক্য। ভয় নেই। সমস্যাকে ভয় পেলে এর সল্যুশন হবে না। 
কোন বিষয় না বুঝলে শিক্ষককে ফ্রাঙ্কলি বলবে। স্যাররা বাঘ না যে খেয়ে ফেলবে। লজ্জা করলেও চলবে না। প্রশ্ন করতে কোন দ্বিধা করবে না।

কোনো বিষয় তোমার সহপাঠী হয়তো ভালো বোঝে ওর কাছে শিখ। শিখতে কোনো লজ্জা নাই। 
সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ। ফেসবুকে তোমাদের গ্রুপ ক্রিয়েট করো। সমস্যা পোস্ট করো, ডিসকাস করো। সার্চ দাও। অনেক গ্রুপ পেজ পাবা। আমাদের রাবি জিওলজি এন্ড মাইনিং গ্রুপে যোগ দাও। পোস্ট করো। 
তোমাদের গ্রুপে তোমাদের টিচারকে এড দাও। গুগোলে সার্চ দাও। স্যারকে ইমেইল করো। জিওলজির ওপর অনেক ব্লগ, ফোরাম আছে সেগুলোতে পোস্ট দাও। এখন পড়াশোনা আর বইয়ের পাতার মধ্যে নিবদ্ধ নেই, অনেকটাই ভার্চুয়াল জগতে চলে গেছে। সুযোগকে গ্রহণ করো। 

শুধুই কী পড়াশোনাঃ 


এতক্ষণ আমার কথা শুনে যদি তোমাদের কারো মনে হয় যে, ভাইয়া শুধু পড়াশোনায় নিমগ্ন হয়ে থাকার পরামর্শ দিচ্ছে তাহলে ভুল করবে। বইয়ের পাতায় বুঁদ হয়ে থাকা ছেলেকে আজ চাকুরির বাজার চায়না। আর চাকুরির প্রসঙ্গই আনা ঠিক না, কারণ লেখাপড়ার উদ্দেশ্যই আর ঠিক থাকেনা। 
বিশ্ববিদ্যালয় সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। এখানে শিক্ষণ এবং নিজেকে গঠনের সকল সুযোগ সুবিধাগুলো প্রদান করে (!)। 
তাই এই সময় ও সুযোগগুলোকে কাজে লাগানো বুদ্ধিমানের কাজ।পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেকে গঠনের জন্য আরো কিছুর প্রয়োজন আছে। অনেক সংগঠন পাবা। তোমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকবে। তোমার জন্য যা মঙ্গলজনক সেখানে যোগ দাও। রাজনৈতিক সংগঠনকে আমি এড়াতে বলবো। কেননা সোনার রাজনীতি আর নেই। 
বিতর্কের প্রতি দুর্বলতা থাকলে বিতর্ক সংগঠনে যোগ দাও। বাচিক শিল্পের চর্চা করতে উচ্চারণ সংগঠনে যোগ দাও। প্রয়োজন আছে। নেতৃত্ব ও সুপ্ত গুণাবলীর বিকাশ ঘটাতে যোগ দিতে পারো রোটার‍্যাক্ট ক্লাব, রোভার স্কাউট।মূলকথা হচ্ছে মনের মধ্যে সংস্কৃতির লালন করো। যোগ দিতে পারো পাঠক ফোরামে ক্যারিয়ার সচেতনতার জন্য। আর প্রযুক্তির ছোঁয়ায় থাকো। কম্পিউটারের ওপর ভালো দখল আনো। এর পাশাপাশি শুদ্ধ বাংলা ও ইংরেজির চর্চা করো।
দেখবে ক্যরিয়ার তোমার পিছু নিয়েছে, তোমাকে ক্যারিয়ারের পেছনে ছুটতে হবে না। 

শেষ কথাঃ 


আশাকরি, নতুন উদ্যোমে শুরু করবে তোমাদের ক্যাম্পাস লাইফ। তোমাদের সাফল্য কামনা করি। তোমাদের কোনো প্রশ্ন থাকলে নিচে কমেন্ট করে জানাও। আমাকে ফেসবুকে ইনবক্স করতে পারোঃ এখানে  

No comments:

Post a Comment