সাহিত্য, শিল্প, সংস্কৃতিতে বিচরণ করতে হলে লোকছড়া চর্চার বিকল্প নাই

একে ইঁদুরদুয়ে দাঁত… / ওপেনটি বায়োস্কোপ… / জামাইরো চুলরে বট গাছের ঝুরিরে… / হাট টিমাটিম টিম… / আশালতা পালঙ পাতা… / আমপাতা জোড়া জোড়া… / খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়োলো… / বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর… / আয় আয় চাঁদ মামা… / আয়রে আয়রে টিয়ে… ইত্যাদি।
আধুনিক কবিতার শুরু শেষ আছে।কিন্তু লোকছড়ার শুরু এবং শেষ বোঝা যায় না। আধুনিক কবিতা পর্যায়ক্রমিকভাবে আবর্তিত হয় কিন্তু লোকছড়ার কোন মিল নেই। এক চরণের সঙ্গে অন্য চরণের কোন সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায় না। আবার আধুনিক কবিতা কোন নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে রচিত হয় কিন্তু লোকছড়ার কোন নির্দিষ্ট বিষয় নাই। একেক লাইনে বা চরণে একেক বিষয় অবতারনা হয়। শিশুরা যেমন একটা প্রশ্ন করার পর তার উত্তর না পাবার আগেই আর একটা প্রশ্ন করে ফেলে তেমনি লোকছড়ার একটা বিষয় এর ভিতর অন্য বিষয় ঢুকে পড়ে।

লোকছড়ার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এর কোন অর্থ পাওয়া যায় না।এর কোন অর্থ থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে। যে এই ছড়াগুলো পড়বে তাকে নিজের মত অর্থ করে নিতে হবে। এই কারণে লোকছড়া চর্চার মাধ্যমে কল্পনাশক্তি বৃদ্ধি পায়। লোকছড়া চর্চা করলে মানুষের কল্পনার ঘোড়া লাগামহীনভাবে টগবগিয়ে ছুটে চলে। তাই বলা যায়, কল্পনাপ্রবন হতে হলে লোকছড়া চর্চার বিকল্প নাই।
আবার দেখা যায় যে, লোকছড়ায় শত্রুকে বধ করা, অন্যায়-অত্যাচার প্রতিরোধ করা, অসম্ভব কার্যকে সফলভাবে সম্পন্ন করার চিত্র প্রতিফলিত হয়। ফলে লোকছড়া চর্চা করলে শত্রুকে ভয় না পাবার শিক্ষা পাওয়া যায়। অন্যায়-অত্যাচার প্রতিরোধ করার শক্তি অর্জিত হয় এবং কোন কার্যকে কঠিন বলে মনে হয় না।
মানবজীবন বিভিন্ন সমস্যায় পর্যবসিত। মানুষ চলতে ফিরতে বিভিন্ন প্রতিকূলতার সন্মুখীন হয়।এসব প্রতিকূলতা জয় করলে তবেই সফল মানুষ হিসেবে গড়ে উঠা যায়। আর এসব প্রতিকূলতা জয় করতে হলে কাউকে ভয় পেলে চলবে না। অন্যায়কে প্রতিহত করতে হবে এবং কোন কাজকে অসম্ভব ভেবে বসে থাকলে চলবে না। সর্বোপরি তাকে কল্পনাপ্রবন হতে হবে। আর এসব অর্জন করতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন লোকছড়া চর্চা করা। লোকছড়া চর্চার মাধ্যমেই উপরোক্ত শক্তিগুলো অর্জন করা যায়।
অন্যদিকে দেখা যায়, লোকছড়া সাধারণত মানব মনের প্রতিচ্ছবি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় নিযে রচিত। যা সহজেই মানুষের মনে গেঁথে যায়। ফলে এই ছড়াগুলোর ভিতরে সহজেই প্রবেশ করা যায়। এই রকম সহজে ছড়ার মধ্যে প্রবেশ করা পরবর্তীতে গভীর কোন কবিতায় প্রবেশ করা সহজ করে দেয়। অর্থাৎ বর্তমান বা আধুনিক, গাম্ভীর্যপূর্ণ কবিতা বুঝতে হলে বা কবিতার মধ্যে প্রবেশ করতে হলে প্রথমেই লোকছড়া চর্চা করতে হবে। লোকছড়া চর্চার মাধ্যমেই আধুনিক কবিতার ভিতরে প্রবেশ করতে হয়।
শিকড় ছাড়া যেমন কোন গাছ বেঁচে থাকতে পারে না তেমনি লোকছড়া চর্চা ছাড়া পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠা যায় না বা আধুনিক কবিতা বা গাম্ভীর্যপূর্ণ সাহিত্যে প্রবেশ করা যায় না। সাহিত্য, শিল্প, সংস্কৃতিতে বিচরণ করতে হলে লোকছড়া চর্চার বিকল্প নাই


প্রাচীনকাল হতে লোকজনের মুখে মুখে যে ছড়াগুলো বিস্তার লাভ করেছে তাকে লোকছড়া বলে।কে এই ছড়াগুলো লিখেছেন তা ইতিহাসে পাওয়া যায় না। কিংবা কখন এই ছড়াগুলো রচনা করা হয়েছে তারও নির্দিষ্ট সময় কেউ বলতে পারে না। শুধুমাত্র ভাললাগা থেকে এগুলো আজও মানুষের মনে রয়ে গেছে

No comments:

Post a Comment